গুয়া টেম্পুরাং লাইমস্টোন কেইভ টি মালেয়শিয়ার সবচেয়ে বৃহত্তম চুনাপাথর গুহা এবং অনুমান করা হয় এটি ৪০০ মিলিয়ন বছরের পুরাতন। মালেয়শিয়ার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত একটি শহর ইপো সেখান থেকে ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে গোপেং নামক জায়গার কাছে অবস্থিত এই গুহাটি। এটি মালয়েশিয়ার সবচেয়ে লম্বা চুনাপাথরের গুহা যা ৩ কিমি এর ও বেশি দীর্ঘ।
কিনতা উপত্যকা নামে পরিচিত এই পুরো অঞ্চলটি এক সময় সাগরের নিচে ছিল। কয়েক বিলিয়ন মাইক্রোস্কোপিক সামুদ্রিক প্রাণী মারা গিয়ে সমুদ্রের তলে তাদের দেহের খোলসগুলো ধীরে ধীরে চুনাপাথরে পরিনত হতে থাকে। তারপর কোন একসময় ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্রের তলদেশ থেকে ওপরে উঠে আসে।
পরবর্তী ২৫০ মিলিয়ন বছর কিংবা তারও বেশি সময় ধরে বৃষ্টিপাত এবং প্রবাহিত পানির দ্বারা চুনাপাথরের শিলা থেকে সিঙ্কহোল, চিমনি এবং গ্যালারীগুলি খোদাই হয়ে বিভিন্ন শেপ তৈরি হতে থাকে। আর এভাবেই কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে চুনাপাথরের ওপরে ক্যালসিয়াম কার্বনেট দ্রবীভূত জমাট বেঁধে ধীরে ধীরে স্ট্যালাগমাইটস এবং স্ট্যালাকটাইটের বিস্ময়কর সৃষ্টি করে। এখানে স্ট্যালাগমাইটস এবং স্ট্যালাকটাইটের একটু সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেই।
স্ট্যালাগমাইটস হল কোন গুহার তল/মাটি থেকে উত্থিত টেপারিং কলাম যা ক্যালসিয়াম লবণযুক্ত পানির ফোঁটা বছরের পর বছর জমে জমে গঠিত হয়। আর অন্যদিকে স্ট্যালাকটাইট হল কোন গুহার ছাদ থেকে আইসিকেলের মতো ঝুলন্ত টেপারিং স্ট্রাকচার যা ক্যালসিয়াম লবণযুক্ত পানির ফোঁটা বছরের পর বছর জমে জমে গঠিত হয়।
একটা খুব ইন্টারেস্টিং বিষয় হল- কোন কারনে স্ট্যালাকাইটাইটের একটি টুকরোও যদি কেটে ফেলা হয় তবে এটি আমাদের জীবদ্দশায় আর বাড়বে না। কেননা এগুলো গড়ে ২00 বছরে ১ ইঞ্চি হারে বৃদ্ধি পায়। ১৯৪৮-১৯৬০এর সময়, কমিউনিস্ট গেরিলারা এই গুহাটি একটি আস্তানা হিসাবে ব্যবহার করেছিল এবং তাদের কিছু গ্রাফিতি এখনও গুহার দেওয়ালে দেখা যায়। ১৯৯৫ সালে গুহাটিকে পর্যটকদের আকর্ষণে পরিণত করতে কাজ শুরু করা হয়। গুহার ভেতরে হেঁটে দেখার জন্য ষ্টীল এবং কংক্রিটের সিঁড়ি তৈরি, দর্শনার্থীদের সেফটির জন্য রেলিং দেয়া। গুহাটিকে আরও দর্শনীয় এবং ঘুরে দেখার উপযোগী করার জন্য গুহার সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গাগুলো আলোকিত করতে স্পট লাইট লাগানো হয়।
Medan Kidd বাস স্টেশন থেকে লাইন ৬৬ নাম্বার বাসে করে যেতে হয় গোপেং স্টেশনে। ২০ মিনিট পরপর ই বাস ছাড়ে সাধারনত। আর গোপেং স্টেশনে পৌঁছাতে সময় লাগে ৫০-৬০ মিনিট। বাস ভাড়া। গোপেং নেমে ট্যাক্সি নিয়ে সরাসরি গুয়া টেম্পুরাং কেইভের কাছে চলে যাওয়া যায়।
গেটের কাছেই টিকেট কাউন্টার আছে যেখান থেকে আপনার পছন্দমতন ট্যুর প্যাকেজ নিতে পারেন।
৪টি ভিন্ন রকমের টিকেট পাওয়া যায় এখানে-
ট্যুর ১ – গোল্ডেন ফ্লোস্টোন
সময়কাল: ৪০ মিনিট সময়: সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত (শেষ ট্যুর বিকাল ৪ টা থেকে শুরু হয়)
টিকেট: প্রাপ্ত বয়স্ক ২০ রিঙ্গিত, শিশু ১০ রিঙ্গিত(বয়স ৬-১২), সিনিয়র ১০ রিঙ্গিত (বয়স ৬0+)
মাইক্যাড রেট: প্রাপ্ত বয়স্ক ৮ রিঙ্গিত, শিশু ও সিনিয়র ৪ রিঙ্গিত
এটি গোল্ডেন ফ্লোস্টোন গুহা পর্যন্ত (প্লাটফর্ম ৩ পর্যন্ত) কংক্রিটের রাস্তা এবং স্টিলের সিঁড়ি বরাবর একটি ড্রাই ওয়াক। এই ট্যুরের জন্য কোনও গাইডের প্রয়োজন নেই।
ট্যুর ২– টপ অফ দি ওয়ার্ল্ড
সময়কাল: ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিট সময়: সকাল ৯ টা থেকে শুরু হয়ে শেষ ট্যুর বিকাল ৩ টায়
খরচ: প্রাপ্ত বয়স্ক ৩০ রিঙ্গিত, শিশু ও প্রবীণ ১৫ রিঙ্গিত
মাইক্যাড রেট: প্রাপ্ত বয়স্ক ১২ রিঙ্গিত, শিশু ও সিনিয়র ৬ রিঙ্গিত
এটিও ড্রাই ওয়াক তবে ৫টি গম্বুজের সবগুলো (প্ল্যাটফর্ম ৫পর্যন্ত)কাভার করে থাকে। এই ট্যুরেও কোনও গাইডের প্রয়োজন নেই।
ট্যুর ৩ – ওয়ার্ল্ড টপ এবং শর্ট রিভার অ্যাডভেঞ্চার
সময়কাল: ৩ ঘন্টা ++ সময়: সকাল ৯ টা থেকে শেষ ট্যুর ১২ টায় শুরু হয়
খরচ: প্রাপ্ত বয়স্ক ৪০ রিঙ্গিত, শিশু ও সিনিয়র ২০ রিঙ্গিত
মাইক্যাড রেট: প্রাপ্ত বয়স্ক ১৫ রিঙ্গিত, শিশু ও সিনিয়র ৭.৫ রিঙ্গিত
ন্যূনতম ব্যক্তি সংখ্যা: ৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক
ভূগর্ভস্থ নদী দিয়ে ফেরার পথে অংশগ্রহণকারীরা ভিজে যায়। তাই এই ট্যুরের জন্য এরকম প্রস্তুতি রাখতে হবে আগে থেকেই। উত্তেজনাপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জিং হিসাবে স্বীকৃত এটি একটি রেঞ্জার-গাইডেড ট্যুর।
ট্যুর ৪ – গ্র্যান্ড ট্যুর
সময়কাল: ৪ ঘন্টা ++ সময়: সকাল ৯ টা থেকে শুরু হয়ে শেষ ট্যুর সকাল ১১ টায়
খরচঃ প্রাপ্ত বয়স্ক ৫০ রিঙ্গিত, শিশু ও সিনিয়র ২৫ রিঙ্গিত
মাইক্যাড রেট: প্রাপ্ত বয়স্ক ৩০ রিঙ্গিত, শিশু ও সিনিয়র ১৫ রিঙ্গিত
ন্যূনতম ব্যক্তি সংখ্যা: ৮ জন প্রাপ্তবয়স্ক
এই সফরটি উত্তর-দক্ষিণ এক্সপ্রেসওয়ের মুখোমুখি সবগুলো অর্থাৎ ৫টি গুহা এবং গুহার পূর্ব দিক জুড়ে পরিচালিত হয়। ফেরা হয় পথটি ভূগর্ভস্থ নদী দিয়ে। তাই এই ট্যুরে ও অংশগ্রহণকারীরা ভিজে যায় বলে পূর্ব প্রস্তুতি রাখতে হবে। উত্তেজনাপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জিং হিসাবে স্বীকৃত এটি একটি রেঞ্জার-গাইডেড ট্যুর।
তবে ট্যুর ৩ এবং ৪ নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপরে। আবহাওয়া খারাপ থাকলে কিংবা প্রতিকূল পরিবেশ না হলে যেকোনো সময় এই ট্যুর বাতিল হতে পারে।
সাথে কি কি নিতে হবেঃ
আমার একটি ভিডিও আছে গুয়া টেম্পুরাং লাইমস্টোন কেইভ নিয়ে যেখানে গুহার ভেতরের সৌন্দর্য ডিটেইলস দেখানোর চেষ্টা করেছি আমি। এই লিঙ্কে গিয়ে ভিডিও টা দেখে নিতে পারেন। আশা করি ভালো লাগবে আপনাদের-
আশা করছি আপনার নেক্সট মালেয়শিয়া ট্রিপে অসাধারন এই জায়গা টি দেখা মিস করবেননা। আপনি যাতে আপনার সুবিধা অনুযায়ী প্ল্যান করতে পারেন সেই জন্য জরুরী সব ইনফরমেশন আমি দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তবু গুয়া টেম্পুরাং লাইমস্টোন কেইভ নিয়ে আরও কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে জানান আমাকে। আমি আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে চেষ্টা করবো আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে।