দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপরাষ্ট্র হল সিঙ্গাপুর। এই দেশের বর্তমান আয়তন ৭২৫ বর্গ কিলোমিটার।
সিঙ্গাপুর শব্দটির উৎপত্তি মালেয়শিয়ান শব্দ “সিঙ্গাপুরা” থেকে। আর এই “সিঙ্গাপুরা” শব্দটি এসছে সংস্কৃত শব্দ “সিমহাপুরা” থেকে। “সিমহা” শব্দের অর্থ “সিংহ” আর “পুরা” শব্দের অর্থ “শহর”। তার মানে সিঙ্গাপুর শব্দের অর্থ সিংহের শহর।
৬৩ টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত ছোট্ট এই দেশটি এখন এশিয়ার অন্যতম ধনী রাষ্ট্র এবং পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। তাই এমন একটি দেশে ঘুরতে গেলে তো বেশ বড় একটা এমাউন্টের বাজেট রাখতে হবে এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু যারা ব্যাকপ্যাক স্টাইলে কম খরচে ঘুরেন তারা কি ছবির মতন সাজানো গুছানো, পরিচ্ছন্ন সুন্দর এই দেশটা না দেখেই থাকবেন?
আপনি যদি কম খরচে সিঙ্গাপুরের মতন ব্যয়বহুল দেশ ঘুরে বেড়াতে চান তবে সেক্ষেত্রে কিছু কৌশল অনুসরণ করতে হবে। তাহলেই খুব অল্প বাজেটে সিঙ্গাপুরের সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব হবে।
সিঙ্গাপুরে হোটেল ভাড়া শুরু ই হয় ২০ ডলার মানে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১৭০০ টাকার মতন। একা ঘুরতে গেলে কিংবা ব্যাকপ্যাক স্টাইলের ট্রাভেলারদের জন্য এটা বেশ বড় একটা এমাউন্ট। তাই আপনি হোস্টেলগুলোতে থাকতে পারেন যেখানে ৮০০-১০০০ টাকার মধ্যে ভালোভাবে থাকতে পারেন।
আবার আপনি চাইলে এয়ারবিনবি কিংবা কাউচসারফিং এর সার্ভিস নিতে পারেন। সিঙ্গাপুরে কোন উৎসব ছাড়া অথবা অফ সিজনে গেলে এগুলোর কোন একটা থেকে থাকার ব্যবস্থা হয়ে যেতে পারে খুব সহজেই। এই দুটোর লিঙ্ক দিয়ে দিলাম।এই লিঙ্ক দুটোতে গেলেই এদের সার্ভিস গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
Airbnb.com এবং couchsurfing.com
তবে এয়ারবিনবি কিংবা কাউচসার্ফিং এর মাধ্যমে বুক করার আগে বাসা সম্পর্কে উক্ত হোস্টের নিয়ম, পছন্দ-অপছন্দ এগুলো খুব ভালো করে পড়ে নিবেন যাতে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় না ঘটে।
সিঙ্গাপুরে ট্যাক্সি কিংবা প্রাইভেট গাড়ী ভাড়া করে কোথাও যাওয়াটা প্রচুর খরচের ব্যপার। পাবলিক বাস আছে খুব ভালো মানের। সেগুলোতে করে যাতায়াত করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে ট্র্যাভেল কার্ড করে নিলে খরচ অনেক কম পড়ে।
দুই ধরনের কার্ড সার্ভিস আছে সিঙ্গাপুরে। একটি হল EZ Link Card এবং আরেকটি হল Singapore Tourist Pass ।
EZ Link Card দিয়ে আপনি শুধু বাস, MRT র ভাড়া ই দিতে পারবেন না বরং ট্যাক্সি ভাড়া, দোকানে খাবার দাবার কিনলে সেগুলোর টাকা দেয়া ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের লেনদেন করতে পারবেন খুব সহজেই।
অন্যদিকে Singapore Tourist Pass দিয়ে শুধু মাত্র MRT, LRT, বাস ইত্যাদির ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন।
তবে এগুলোর আরও বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা, অসুবিধা আছে। আপনি কতদিন সিঙ্গাপুরে থাকবেন, কতোটা ট্র্যাভেল করবেন এগুলোর ওপর নির্ভর করে আপনার সুবিধা অনুযায়ী যেকোনো একটা কার্ড করে নিতে পারেন। তবে কার্ড করানো ছাড়া সিঙ্গাপুরে MRT, LRT অথবা বাসে যাতায়াত করতে অনেক খরচ পড়ে যায়।
আর সিঙ্গাপুর এমনিতেই খুব ছোট একটা দেশ আমাদের ঢাকা থেকে ও এর আয়তন অনেক কম। তাই গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে হেঁটে হেঁটে অনেক জায়গায় যেতে পারেন। এতে একসাথে অনেকগুলো সুবিধা হবে-
১। যাতায়াত খরচ অনেক কমে যাবে,
২। নতুন একটি দেশের মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা, জীবনযাত্রা ইত্যাদি দেখে ভিন্ন রকম এক অভিজ্ঞতা হবে,
৩। জানা-শোনা পরিচিত জায়গাগুলো ছাড়াও নাম না জানা আরও অনেক টুকিটাকি জিনিস দেখা হয়ে যাবে। সিঙ্গাপুরের সাধারন রাস্তা দিয়ে হাঁটলেও খুব অসাধারন অভিজ্ঞতা হয়। কেননা ওদের রাস্তায়, পথে ঘাটে, পার্কে, বেঞ্চিতে ও বিভিন্ন ধরনের শৈল্পিক কাজ, চিত্রকর্ম ইত্যাদির নান রকম ছোঁয়া দেখতে পাবেন।
সিঙ্গাপুরে অন্যান্য সব কিছুর মতই খাবারের খরচ ও অনেক বেশী। আপনি হোটেল কিংবা হোস্টেলে সাধারনত কমপ্লিমেন্টারি হিসেবে সকালের নাস্তা পাবেন।
আর দুপুরে, রাতে যদি ফাস্ট ফুড খেতে চান তবে কম খরচে খাবারের জন্য আছে ম্যাক ডোনাল্ডস, কেএফসি ইত্যাদি। আর যদি রাইস আইটেম খেতে চান তবে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত ফুড কোর্টে যেতে হবে। গুগল ম্যাপ দেখে খুঁজে নিতে পারেন। ফুড কোর্টে ২ আইটেমস এর সেট মেনু পাওয়া যায় সর্বনিম্ন ২ ডলারে। এটা আমার কাছে মনে হয়েছে একটু ভারী খাবার হিসেবে কম খরচে সেরে ফেলা যায়। এছাড়া ইন্ডিয়ান ও অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের রেস্টুরেন্ট আছে যেগুলোতে খাবারের খরচ অনেক বেশী।
হালকা স্নেক্স টাইপের খাবারের জন্য 7/11 সব চেয়ে ভালো অপশন। সারাদিনের জন্য বাইরে বের হলে ব্যাগে হাল্কা কিছু স্নেক্স রাখা ভালো। এতে ক্ষুধা লাগলে বেশী টাকা দিয়ে যেকোনো জায়গা থেকে খাবার কিনে খেতে হবেনা। আর সিঙ্গাপুরে যেহেতু কোন স্ট্রীট ফুড কিংবা যেকোনো জায়গায় খাবারের দোকান নেই তাই সাথে হাল্কা কিছু খাবার রাখলে খুব ভালো হয়।
আরেকটা খুবই ব্যয়বহুল বিষয় হল মিনারেল ওয়াটার। সিঙ্গাপুরে হাফ লিটার মিনারেল ওয়াটার এর বোতলের দাম সর্বনিম্ন ৩ ডলার।
নাহ এটা শুনে ভয় পাওয়ার কিছু নাই। কারন ওখানে লাইব্রেরী, মিউজিয়াম এসব জায়গাগুলোতে পানযোগ্য পানি থাকে। তাই আপনি সাথে একটা পানির বোতল রাখলে এরকম যেকোনো জায়গা থেকে পানি ভরে নিতে পারেন।
কোথাও বেড়াতে গেলে খাবার, যাতায়াত, থাকার খরচ এগুলোর জন্য খুব বড় একটা এমাউন্ট চলে যায়। তাই আপনি যদি এই বিষয়গুলোতে খরচ কমিয়ে আনতে পারেন তবে টোটাল ট্যুরের খরচ অনেকখানি কমে যায়।
আশা করি এই আর্টিকেল টি আপনার সিঙ্গাপুর ভ্রমনের ক্ষেত্রে সাধ আর সামরথের সুন্দর একটা সমন্বয় করতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে।